চর সেকান্দর সফিক একাডেমী প্রতিষ্ঠার পটভূমি।

চর সেকান্দর সফিক একাডেমী

প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা

অলোক চন্দ্র দাস, প্রধান শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত)

১ জানুয়ারী ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সাল, দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর পথ-পরিক্রমায় আমাদের গর্ব ও অহংকারের প্রতীক চর সেকান্দর সফিক একাডেমী একটি আদর্শ ও অন্যতম সেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্ব-মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কবির ভাষায়- ‘শির নেহারি আমারি, নতশির ঐ শিখর হিমাদ্রির!’। সত্যিইতো- বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সরকারি-বেসরকারি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে এ স্কুলের অগণিত ছাত্র-ছাত্রী। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়ায় জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ ও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা, শিক্ষা বোর্ড হতে অভিনন্দন সনদপত্র প্রাপ্তি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে সেরা বিদ্যালয়ের খেতাবসহ পুরষ্কার লাভ ইত্যাদি এই বিদ্যালয়কে হিমালয়ের মত শির উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
তৎকালীন ৯নং চর আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আবদুল হামিদ (খাঁন সাহেব) চর সেকান্দর, চর নেয়ামত ও চর হাসান হোসেন গ্রামের বিদ্যোৎসাহী, সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট ভদ্র মহোদয়গণের একটি সভা আহ্বান করেন। সভার স্থান- ৯নং চর আলগী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চর সেকান্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারিখঃ ১০/১২/১৯৭৪ ইং, সময়ঃ অপরাহ্ন ২ ঘটিকা, আলোচ্য বিষয়ঃ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া সংক্রান্ত।

যথাসময়ে ৪০ জনের উপস্থিতিতে নির্ধারিত স্থানে মৌলভী ছায়েদল হক সাহেবের সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক জনাব আবদুল হামিদ (খাঁন সাহেব), চেয়ারম্যান, ৯নং চর আলগী ইউনিয়ন, জনাব গোলাম মাওলা চৌধুরী (চর নেয়ামত), ভাইস চেয়ারম্যান, ৯নং চর আলগী ইউনিয়ন, জনাব সফিক উদ্দিন, ইউপি সদস্য, ০১নং ওয়ার্ড, ৯নং চর আলগী ইউনিয়ন, জনাব খোরশেদ আলম পাটোয়ারী, ইউপি সদস্য, ১নং ওয়ার্ড, ৯নং চর আলগী ইউনিয়ন, বাবু দ্বিজেন্দ্র লাল দাস (মানিক ডাক্তার), বাবু শিশির কুমার রায়, বাবু ব্রজবালক দাস, জনাব মোঃ সানাউল্যাহ, জনাব মোঃ হানিফ (মাষ্টার), বাবু রথীন্দ্র কুমার দাস, বাবু প্রাণধর দাস, বাবু পরেশ চন্দ্র দাস (মাষ্টার), বাবু কামাক্ষ্যা চরণ সাহা, বাবু শম্ভু নাথ রায়, বাবু অলোক চন্দ্র দাস সহ আরও অনেকে। সভায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পর দেখা যায় যে, মাধ্যমিক পর্যায়ে এ এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক দূরবর্তী স্কুলে গিয়ে পড়তে হয় বলে তাদের অধিকাংশই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। তাই এ অঞ্চলে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরী মনে করা হয়। সভায় জনাব গোলাম মাওলা চৌধুরীর প্রস্তাবে এবং বাবু শম্ভু নাথ রায় এর সমর্থনে চর সেকান্দর গ্রামে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি দান করার আহ্বান করা হলে সর্বমোট ১৫ জন স্বেচ্ছায় ভূমি দান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তন্মধ্যে ইউপি সদস্য জনাব মোঃ সফিক উদ্দিন নিজে সর্বোচ্চ ১.৬১ একর ভূমি দান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলে সরকারী বিধি মোতাবেক তাঁহাকে প্রতিষ্ঠাতা করে বিদ্যালয়টিকে চর সেকান্দর সফিক একাডেমী নামকরণ করার সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি অর্গানাইজিং কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই কমিটিই ব্যবস্থাপনা কমিটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। উল্লেখিত কমিটি নিম্নরূপঃ

ক্রমিক নং নাম পদবী
০১ জনাব আবদুল হামিদ সভাপতি
০২ বাবু রসরাজ দাস সহ-সভাপতি
০৩ জনাব সানাউল্যাহ সম্পাদক
০৪ জনাব গোলাম মাওলা চৌধুরী সদস্য
০৫ জনাব মোঃ সফিক উদ্দিন সদস্য
০৬ জনাব মোঃ হানিফ সদস্য
০৭ বাবু দ্বিজেন্দ্র লাল দাস (মানিক ডাক্তার) সদস্য
০৮ বাবু ব্রজ বালক দাস সদস্য
০৯ বাবু শম্ভু নাথ রায় সদস্য
১০ বাবু প্রাণধর দাস সদস্য
১১ বাবু কামাক্ষ্যা চরণ সাহা সদস্য

 

ভূমি দাতাগণের তালিকাঃ 

ক্রমিক নং নাম ক্রমিক নং নাম
০১ জনাব মোঃ সফিক উদ্দিন ০৯ বাবু শম্ভু নাথ রায়
০২ বাবু রসরাজ দাস ১০ বাবু গুনধর দাস
০৩ বাবু দিনেশ চন্দ্র দাস ১১ বাবু প্রাণধর দাস
০৪ বাবু চিন্তা হরণ দাস ১২ বাবু রথীন্দ্র কুমার দাস
০৫ বাবু সুরথ চন্দ্র দাস ১৩ বাবু মৃদুল চন্দ্র দাস
০৬ বাবু অজিত চন্দ্র দাস ১৪ বাবু বাসুদেব দাস
০৭ বাবু কামাক্ষা চরণ সাহা ১৫ মিসেস সুকুমারী দাস
০৮ বাবু শিশির কুমার রায়

[২০০০ সালের পরে জনাব আলহাজ্ব রাজামিয়া ২০ শতাংশ ভূমি দান করেন]

ঐ তারিখের সভায় চাঁদা ও ধান আদায়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৮/১২/১৯৭৪ইং তারিখ অর্গানাইজিং কমিটি তথা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করে জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে ০১/০১/১৯৭৫ইং তারিখ হতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিম্নবর্ণিত স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক গণকে নিয়োগ দেওয়া হয়ঃ

১.  বাবু রবীন্দ্র কুমার সাহা (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক)

২.  বাবু রাধারমন মজুমদার

৩. বাবু অভিরাম দাস

৪.  জনাব ছিদ্দিক উল্যাহ

৫.  বাবু প্রসনজিৎ দাস

নেপুল চন্দ্র দাস (হাওলাদার বাড়ী) কে দপ্তরী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাবু প্রসনজিৎ দাস কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা পেশা হতে নিজেকে সরিয়ে নেন। জনাব মোঃ সানাউল্যাহ কে বিদ্যালয় পরিচালনার বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তাঁহাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দান করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় চর সেকান্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে ঐ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে একটি টিনের ছাপরা দিয়ে ক্লাস করানো হয়। তৎপরবর্তী সময়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় বর্তমান বিদ্যালয়ের ফুলওয়াল টিনসেডের জায়গায় বর্তমান পুকুরটি খনন করে ভিটি তৈরীর মাধ্যমে একটি টিনের ঘর করা হয় এবং শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হয়। ০১/০১/১৯৭৫ইং সাল হতে বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং সরকারী অনুদান প্রাপ্ত হয়। প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ সানাউল্যাহ’র দক্ষ পরিচালনায় বিদ্যালয়ের লেখা-পড়ার যথেষ্ট উন্নতি হয় এবং আর্থিক সাশ্রয়ের মাধ্যমে ও বিভিন্ন ভাবে সরকারী ও বেসরকারী উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির মাধ্যমে কিছু জমি খরিদ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের জমির পরিমান প্রায় ৮.০০ একর। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে পরিচালিত হওয়ার পর ০১/০১/১৯৮৪ইং সাল থেকে নবম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। অবশ্য ইতোপূর্বেও নবম-দশম শ্রেণির পাঠদান করে অন্যস্কুল থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়ের নামে ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মানবিক শাখায় এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একজন ছাত্র উত্তীর্ণ হয়। চর সেকান্দর সফিক একাডেমী হতে প্রথম উত্তীর্ণ ছাত্রটি দুলাল চন্দ্র দাস, পিতাঃ হারান চন্দ্র দাস, ২য় বিভাগ, মানবিক শাখা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে। ১৯৮৬ইং সাল থেকে ২০২৫ইং সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর সফলতার দ্যুতি ছড়িয়ে এস.এস.সি, জে.এস.সি এবং জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বহু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের জন্য অভাবনীয় সুনাম কুড়িয়ে এনেছে। লেখা-পড়ার সাথে সাথে সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও স্কাউটিং ছিল সমান ও সমান্তরাল। মোঃ আবদুল্যা, মানস মন্ডল, নিপেন দাস, দিদার হোসেন, মোস্তাক হোসেন তৌকির, তমালিকা দাস, প্রান্ত দাস, রায়হান, আকরাম হোসেন সহ আরও অনেকের নাম উল্লেখযোগ্য। দিদার হোসেন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের গ্রান্ডভেলী স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। ২০০৪ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্রী মৈত্রী রানী দাস স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মহিলাদের ব্যাডমিন্টনে জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান লাভ করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ক্রীড়া আসর সাফ গেমসের ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে রেফারীর সহযোগী হিসেবে জাজম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে স্কাউটার অনিক দাস ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে ডিসপ্লেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করে আই.সি.সি হতে সনদপত্র লাভ করে। আকবর হোসেন রিদন দীর্ঘদিন জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে সে ফুটবল কোচ হিসেবে নিয়োজিত। সর্বশেষ ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র মীর সাব্বির সাঁতার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে। চর সেকান্দর সফিক একাডেমী কম পক্ষে চার বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মাননা লাভ করে। তন্মধ্যে সবর্শেষ ২০১৬ ও ২০২৪ সাল উল্লেখযোগ্য। চর সেকান্দর সফিক একাডেমী ২০০৯ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে সম্মাননা হিসেবে অভিনন্দন সার্টিফিকেট লাভ করে। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে সেরা বিদ্যালয়ের খেতাব প্রাপ্তি সার্টিফিকেটসহ এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার লাভ করে। বিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তাক হোসেন তৌকির এস.এস.সি পরীক্ষায় জি.পি.এ- ৫  (গোল্ডেন) ফলাফল লাভ করে এবং কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট নম্বরের ভিত্তিতে ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করে [বৃত্তি প্রাপ্তি ফলাফল থেকে গৃহীত]।

সর্বশেষ বলবো গঙ্গাজলে গঙ্গা পূজার মতই সফিক একাডেমীর উদাহরণ সফিক একাডেমীই। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন এ বিদ্যালয়েরই একজন মেধাবী ছাত্র ও সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ অলঙ্কৃত করেন। সুবর্ণজয়ন্তীর শুভলগ্নে সফিক একাডেমীর মস্তকে এ যেন স্বর্ণ খচিত রাজমুকুট শোভা পাচ্ছে। কর্মরত অবস্থায় জনাব মোঃ সানা উল্যাহ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের সম্মাননা লাভ করেন। প্রধান শিক্ষক বাবু অলোক চন্দ্র দাস পূর্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হন। স্কাউট শিক্ষক জনাব গোলাম সরওয়ার উপজেলার শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক নির্বাচিত হন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন ২০২৩ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়- লক্ষ্মীপুর হতে গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা লাভ করেন।

বিদ্যালয়ের যাহা কিছু অর্জন তার সবকিছুতেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অর্ধশত বছরের মধ্যে যে সকল ব্যক্তিত্ব সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, তাদের নামের তালিকাঃ

নির্বাচিত সভাপতিঃ

১.  জনাব আবদুল হামিদ (মরহুম)

২.  বাবু রসরাজ দাস (প্রয়াত)

৩. জনাব আবুল আখের (মরহুম)

৪.  জনাব আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন

৫.  আবুল খায়ের মোঃ ইসমাইল

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকঃ

১.  জনাব মোঃ সানাউল্যাহ (মরহুম)

২.  বাবু অলোক চন্দ্র দাস

৩. জনাব মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন (বর্তমানে কর্মরত)

[নোটঃ তিনজন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাড়াও বাবু রবীন্দ্র কুমার সাহা এবং বাবু পুষ্পেন্দু চন্দ্র দাস, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।]

অনেক প্রাপ্তি ও আনন্দের মাঝেও চর সেকান্দর সফিক একাডেমী অনেক দুঃখ ও বেদনার মর্মস্পর্শী স্মৃতি নিয়ে ৫০ বছরের মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৩ এপ্রিল বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে (সন্ধ্যার পরে) প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোঃ সফিক উদ্দিন আততায়ীর হাতে নিমর্মভাবে খুন হন। ১৯৮০ সালের পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আহ্বায়ক ও প্রথম ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জনাব আবদুল হামিদ (খাঁন সাহেব) আততায়ীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কর্মরত অবস্থায় পরলোক গমন করেন। শিক্ষক জনাব মোঃ হানিফ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষক জনাব নুর হোসেন, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। জনাব রাধারমন মজুমদার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। জনাব গোলাম সরওয়ার পিত্তথলির পাথর অপসারণের অপারেশন করতে গিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাওলানা মোঃ শহীদুল্যাহ লিভার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে বা তৎপরবর্তী অনেক মহান ব্যক্তিত্বই আজ আমাদের মাঝে নেই।  যেমন, জনাব গোলাম মাওলা চৌধুরী, জনাব মোঃ সানাউল্যাহ, জনাব রসরাজ দাস, জনাব হাফিজ উদ্দিন, জনাব সাইফ উল্যাহ, বাবু ব্রজবালক দাস, বাবু গুনধর দাস, বাবু মৃদুল চন্দ্র দাস, বাবু কামাক্ষ্যা চরণ সাহা সহ আরও অনেকে। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদেরকে বেহেস্ত/স্বর্গ বাসী করেন, তাহাই আমাদের কাম্য। তাঁহাদের প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য-

উদয়ের পথে শুনি কার বানী

ভয়নাই ওরে ভয় নাই,

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

আমাদের পূর্বসূরীদের শ্রম, ঘাম, ত্যাগ ও আন্তরিকতার ফসল এই চর সেকান্দর সফিক একাডেমী। তাঁহারা আমাদের জন্য যাহা কিছু রেখে গিয়েছিলেন তার ভার দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে আরও বিস্তৃত হয়ে বর্তমান প্রজন্মের কাজ করার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে পূর্ব সূরীদের মতই আমাদের উত্তর সূরীরাও সেই দায়িত্ব পালন করার দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। আধুনিক সভ্যতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে বর্তমান প্রজন্মকে শক্তি ও সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই তো বলা যাবে-

সেই ধন্য নরকূলে লোকে যারে নাহি ভুলে

মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন।

চর সেকান্দর সফিক একাডেমী প্রতিষ্ঠার পটভূমি